সর্বশেষ

Thursday, July 14, 2022

হযবরল শিক্ষা ব্যবস্থা

হযবরল শিক্ষা ব্যবস্থা


হযবরল শিক্ষা ব্যবস্থা


শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। সেই শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের দেশে কিছুটা ভিন্নরকম। শিক্ষার উন্নতি না হলে কখনো একটি দেশ কিংবা কোন জাতির উন্নতি হতে পারবেনা। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায়, শিক্ষার্থীদের নীতি-নৈতিকতার যেনো চরম অবক্ষয় হয়েছে। শিক্ষকের প্রতি দেয়া হচ্ছেনা কোনো সম্মান, করা হচ্ছেনা কোনো শ্রদ্ধা। নিউজফিডে ভেসে আসে, শিক্ষকদের হেনস্থা এবং অবমাননা, পিতৃতুল্য শিক্ষককে কুপিয়ে হত্যা। এগুলোতেই বোঝা যাচ্ছে বর্তমান শিক্ষায় নীতি-নৈতিকতার কতটা অবক্ষয় হয়েছে। মানুষ গড়ার কারিগরকে যদি সম্মান করতে না পারি, তাহলে মানুষ হবো কিভাবে? পরবর্তীতে উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হয়ে অন্যদের প্রতি সম্মান আসবেই বা কিভাবে?
একারণেই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, তার নিচু পদের কাউকে কিংবা তার নিকট সেবা গ্রহণ করতে আসা ব্যক্তিদের সাথে মন্দ ব্যবহার করতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেনা। এভাবেই সমাজও পতিত হচ্ছে চরম অবক্ষয়ে।

শুধু শিক্ষিত হলে হবে না, শিক্ষা মান উন্নয়নে কাজ করতে হবে। আমাদের পাঠ্যবই থেকে শেখানো হয় ইতিহাসের কেচ্ছা-কাহিনী এবং তা রীতিমতো গলাদ্ধকরণ করানো হয়। কিন্তু উচিত ছিলো ইতিহাস থেকে শিক্ষা লাভ করা। কিন্তু তা না করে কখন কি হয়েছে মুখস্থ করানো হচ্ছে। মুখস্থ করার ফলে, আমাদের উপকার চেয়ে অপকার বেশি হচ্ছে। যার ফলে ইতিহাস পড়ার আসল উদ্দেশ্যই আত্মস্থ হচ্ছে না।

শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণের জন্য নয় বরং খাতায় উগলানোর জন্য এগুলো মুখস্থ করছে। কোনো লেখককে তার বই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে সম্পূর্ণ বলতে পারবে কি না সন্দেহ থেকে যায়।
অথচ একজন পাঠককে কেনো সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ ঠোটস্থ করাই শিক্ষা বলা হচ্ছে। আমরা এতো পড়াশুনা করি অথচ চাকরি পেতে গেলে জিজ্ঞেস করা হয় আমাদের অতিরিক্ত স্কিলস আছে কি না।
সারাজীবন আমাদের বইয়ের কেচ্চা-কাহিনী মুখস্থ করেই পার করানো হলো, তাহলে এখন এসে অন্যসব স্কিলস খোঁজা হয় কেনো?

চাকরি করাই যখন উদ্দেশ্য। তাহলে স্কিলস না বাড়িয়ে গল্প কেচ্ছার বইয়ের মতো সিলেবাস পড়ানো হচ্ছে কিন্তু আগে থেকেই স্কিলস ডেভেলপ্ড করানো হচ্ছেনা কেনো ? নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত সকলকে বেসিক বিষয়গুলি জানানো আবশ্যক।
এরপর থেকে তার পেশন অনুযায়ী শিক্ষাদান করানো উচিত। নয়তো জাতি কখনোই একজন সঠিক দক্ষ ব্যক্তিত্ব পাবেনা। কোনো বিষয়ে দক্ষ ব্যক্তিত্ব ছাড়া সমাজ কিংবা দেশের উন্নতি করা সম্ভব নয়।

আমাদের সমাজে দেখা যায় অসংখ্য শিক্ষার্থী ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন বুনে ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে কিংবা অন্যকোনো কিছু। এবং সে অনুযায়ী, সে প্রস্তুত হতে থাকে। কিন্তু সেই স্বপ্ন মাত্র একটি পরীক্ষায় দু-একঘন্টায়, দু-একটি ভুল করার কারণেই শেষ হয়ে যায়। অপরদিকে একজন  তার থেকে কম মেধাবী হয়েও আন্দাজে দু-একটি সঠিক করার কারণে কিংবা একটু গলাদ্ধকরণে এক্সপার্ট থাকার কারণে তার যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়ে যায়।
এতো প্রতিযোগির মধ্যে, দু-এক ঘন্টায় কিভাবে কারও যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয় তাও বুঝে আসেনা। সকলেই ভালো করলেও, সকলকে সুযোগ দেয়ার মতো যথেষ্ট পরিমান সামর্থ্যও আমাদের নেই।
এর ফলে হয়তোবা কখনো কখনো সঠিক ব্যক্তিটিকে আমরা, সঠিক কাজ করার সুযোগ দিতে পারি না।

শিক্ষাব্যবস্থায় যে কাজগুলি আমাদের উন্নত করতে সাহায্য করবে, সে কাজগুলো হাতে-কলমে শিখাতে হবে।
শুধুমাত্র মুখস্থ কিংবা খাতা ভরানোর জন্য শিখলে, সেটি কিভাবে আমাদের উন্নত করবে তা এখনও অজ্ঞাত। যে দেশগুলি উন্নত, তাদের ভিন্নরকম কিছু পদ্ধতি রয়েছে। তারা শিশুদেরকে ছোট থেকেই আবিষ্কারের নেশা ধরিয়ে দেয় কিংবা ব্যবসায় কৌশল শেখায়। অনেক কিছু আবিষ্কার করতে গিয়ে, তারা হাস্যকর কিছু বস্তু তৈরি করে ফেলে এবং সেটি কোন কাজে আসেনা। তবে, এই প্রশিক্ষণের ফলে সে দক্ষ হয়ে যায় এবং একটি সময় অনেক ভালো কিছু আবিষ্কার করে ফেলে। বিজনেস স্টাডিজ-এ তাদের উন্নতির মাধ্যম হচ্ছে উপার্জন করা। তাদের প্রস্তুত করা হয় এমনভাবে, সে যদি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে এক ডলার ইনকাম করতে পারে তাহলে পরবর্তী লেভেলে যেতে পারবে। এভাবে বিভিন্ন টাস্কের মাধ্যমে তাদের দক্ষ করে তোলা হয়।

সেখানে, গর্ভাবস্থায় মায়েরা বিভিন্ন প্রবলেম সলভ, বই পড়া, আল কুরআন পড়া, ম্যাথ কিংবা পাজল সলভ করা এবং কিছু পুষ্টিকর খাবারের মাধ্যমে সন্তানের ব্রেইনকে আরও সতেজ করে তোলে।
আমাদের সমাজ শুধু বোঝে পড়াশোনা করো আর চাকুরী করো। ভালো চাকুরী না পেলে সে ব্যর্থ।
আমাদের সমাজে এমন কোন সুষ্ঠু সিস্টেম নেই যার মাধ্যমে আমরা বিষয়গুলি সঠিকভাবে শিখতে পারবো কিংবা সেই সিস্টেম কবে হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।

তাই আমাদের শুধু চাকুরির উদ্দেশ্যে পড়াশুনা নয় বরং বিভিন্ন সোর্স থেকে জ্ঞান আহরণ করতে হবে। জানতে হবে পৃথিবী থেকে মহাবিশ্ব। তবেই দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব। একটি মানুষ কখনোই সব বিষয়ে এক্সপার্ট হতে পারবেনা কিন্তু বর্তমান ইন্টারনেটের যুগে সব বিষয়ে জানার ক্ষমতা সবাই রাখে।
বর্তমান টেকনোলজিতে দক্ষতা অর্জন করা প্রতিটি মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই যুগে টেকনোলজির সাথে তাল মিলাতে না পারলে, তলিয়ে যাবে টেকনোলজির অতল গহ্বরে। বর্তমান যেনো প্রতিটি পদকে রিপ্লেস করে নিয়েছে এই টেকনোলজি।

কোনো ইনফরমেশন জানতে, যেতে হয়না কোনো পন্ডিতের কাছে, যা রিপ্লেস করে নিয়েছে গুগল মামা। SMS সিস্টেম রিপ্লেস করে নিয়েছে ডাকপিওনকে। রাইড শেয়ারিং ভাত মেরেছে ট্যাক্সি ড্রাইভারের। কাউন্টারে টিকিট কাটতেও ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয়না। দোকান এবং ব্যবসাকে রিপ্লেস করেছে ই-কমার্স। কিছুদিন পর থাকবেনা ড্রাইভার, সেল্ফ ড্রাইভিং-এ চলবে ট্রেন, বাস। টেকনোলোজি যে শুধু রিপ্লেস করছে তা নয়। নতুন নতুন প্রফেশন, জব, ফ্রিল্যান্সারও তৈরি করে দিচ্ছে।
টেকনোলজির সাথে প্রতিনিয়ত নিজেকে আপডেট করতে হবে। নাহলে পিষে মরতে হবে টেকনোলজি দানবের হাতে।

মাথায় সবসময় থাকতে হবে জানার আগ্রহ। এটি কি? এর কাজ কি? জানার জন্য ঘাটতে হবে বিভিন্ন বই কিংবা বর্তমানের সবচেয়ে সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ইন্টারনেটের শরণাপন্ন হতে হবে। এখন থেকে রিস্ক নিতে শিখতে হবে, কোনো কাজে ব্যর্থতা আসতেই পারে। তবে, সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে হবে দুর্বার গতিতে। এভাবেই কোনো না কোনো বিষয়ে অবশ্যই সফলতা আসবে।
মূলকথা হচ্ছে, চাকুরির পিছনে না ছুটে, লাভ-ক্ষতির দিক বিবেচনা না করে, কাজে নামতে হবে। সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে হবে সকলকে। জানতে হবে সব বিষয়ে, দক্ষ হতে হবে অনেক কাজে। তাহলেই কেবল শিক্ষা ব্যবস্থায় হযবরল অবস্থা দূর হবে।

রাফিউল আহসান,
01765906880
Rafi2ahsan@gmail.com
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।